অচিরেই বিচরণ শুরু করবে দ্রুত বর্ধনশীল ভিনদেশি এক ছাগল।

দেশের বাজারে অচিরেই বিচরণ শুরু করবে দ্রুত বর্ধনশীল ভিনদেশি এক ছাগল। সাদা ও বাদামী রঙের এই ছাগলের নাম বোয়ার। এসেছে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নিয়ে আসা এসব ছাগল এরই মধ্যে খাপ খাইয়ে নিয়েছে দেশি আবহাওয়া আর জলবায়ুর সঙ্গে। চলছে পশু বিজ্ঞানীদের হরদম পরীক্ষা-নীরিক্ষা। দ্রুততম সময়ে দেশি জাতের ছাগলের সঙ্গে শংকরায়নের (ক্রস ব্রিডিং) মাধ্যমে দ্রুত বর্ধনশীল এই ছাগলের সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়ন করা হচ্ছে।

সাভারে বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএলআরআইতে তাই আফ্রিকান ছাগল নিয়ে বিজ্ঞানীদের ফুরসতহীন ব্যস্ততা।

এরই মধ্যে সেখানকার পরীক্ষাগারে বাংলাদেশি চার ছাগী ও এক আফ্রিকান ছাগলের ঘরে এসেছে নতুন চার অতিথি।

বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ছাগল ভেড়া উৎপাদন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আজহারুল ইসলাম তালুকদার  জানান, সময়ের চাহিদার প্রয়োজনে ভিনদেশি এই ছাগলের সম্প্রসারণে কাজ করছেন তারা।

তিনি বলেন, এক সময় দেশি মুরগী আর ডিমের নির্ভরশীলতার বিপরীতে দেশে আজ পোল্ট্রি শিল্পের যেমন বিকাশ হয়েছে, তেমনি এই ছাগল নিয়েও আশাবাদী আমরা। দেশে ছাগলের মাংসের চাহিদার বিপরীতে এই প্রজাতির ছাগলের সম্প্রসারণ নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. নজরুল ইসলাম  বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিটের মাধ্যমে পাঁচটি আফ্রিকান বোয়ার জাতের ছাগল আমাদের এখানে আনা হয়। দ্রুত বর্ধনশীল জাত বলে বেঙ্গলমিট সরকারের কাছে এই ছাগল আমদানির অনুমতি চেয়েছিলো।
তিনি জানান, এই প্রজাতির ছাগলগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য- এগুলো দ্রুত বর্ধনশীল। মাংসও সুস্বাদু।
মহাপরিচালক আরো জানান, দেশে প্রায় আড়াইকোটি ছাগলের অধিকাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের। এগুলোর গড় ওজন ১২-১৬ কেজি। অন্যদিকে আফ্রিকার বোয়ার প্রজাতির ছাগলের গড় ওজন ৯০ থেকে ১৩৫ কেজি।

প্রতিদিন এই ছাগলের বৃদ্ধির হার ২১০ থেকে ২২০ গ্রাম। সে তুলনায় দেশি জাতের ছাগলের বৃদ্ধির হার ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম।

দেশে বছরে মাংসের চাহিদা ৬৪ লাখ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হচ্ছে ১৯ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসেবে বছরে মাথাপিছু ৪৩ দশমিক ৮  কেজি চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৩ কেজি মাংস। তাই নতুন জাতের এই ছাগলের সম্প্রসারণ নিয়ে আশাবাদী দেশি বিজ্ঞানীরা।
প্রাণি সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. এরশাদুজ্জামান  বলেন, রাম ছাগল বলে পরিচিত দেশি যমুনপারি ছাগলের সঙ্গে আফ্রিকান বোয়ার প্রজাতির ছাগলের সংমিশ্রণে এই জাতের ছাগলের সম্প্রসারণের চিন্তা ভাবনা চলছে। বিষয়টি আমরা কারিগরি কমিটিকে জানিয়েছি। কমিটির বিশেষজ্ঞরা আরো পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকেরই আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস ছাগল পালন। বেকার সমস্যা ও দারিদ্র্য কমানোর পাশাপাশি মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে নতুন প্রজাতির ভিনদেশি এই ছাগলের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সূএ-বাংলানিউজ

Exit mobile version