রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কিছু অজানা তথ্য

 

 

প্রায় পনের বছর ধরে তিনি শাসন করছেন। সবকিছু এভাবে চলতে থাকলে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন রাজত্ব। বিশ্বের যে দু’টো দেশকে ক্ষমতাধর মনে করা হয়, তিনি তার একটার প্রেসিডেন্ট। তিনি ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন অনেকের কাছেই প্রিয় ব্যক্তিত্ব, আবার অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ, নিন্দিত। আজ এই আলোচিত-সমালোচিত নেতা সম্পর্কে তুলে ধরা হল কিছু তথ্য।
১. মৃত্যুপুরী থেকে ফিরেছিলেন পুতিনের মা
১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ ছিলো অবরুদ্ধ। জার্মান এবং ফিনিশ বাহিনী সকল ধরণের যোগাযোগ এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়েছিলো। অবরুদ্ধদের মাঝে ছিলেন পুতিনের মা মারিয়া ইভানোভনাও। এই অবরোধের সময় প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়। নিহতদের মাঝে পুতিনের বড় ভাইও ছিলেন। কিন্তু বেঁচে যান ইভানোভনা। আর এরপরই জন্ম হয় পুতিনের।
২. পুতিনের বাবা ছিলেন হতদরিদ্র
পুতিনের বাবা অত্যন্ত দরিদ্র একজন মানুষ ছিলেন। সেই সাথে তিনি ছিলেন বদরাগী। পুতিনকে খুব পছন্দ করলেও পদে পদে শুধু ভুল ধরতেন আর বকাঝকা করতেন। পুতিনের দাদা লেনিনের গ্রামের বাড়িতে শেফ ছিলেন। এমনকি তিনি স্টালিনের বাবুর্চির কাজও করেছেন।
৩. বেড়ে উঠতে জুডো শিখেছিলেন পুতিন
যখন বয়ঃসন্ধিকালে ছিলেন, পুতিন খেয়াল করলেন অন্য বালকরা তার চেয়ে দ্রুত বেড়ে উঠছে। নিজের বেড়ে ওঠা তরাণ্বিত করতে তিনি জুডো শিখতে শুরু করেন। তিনি জুডোতে ১৮ বছর বয়সে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন। এখনো তিনি মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নেন নিয়মিত।
৪. বিয়ের আগে প্রথম স্ত্রী জানতেন না পুতিনের আসল পরিচয়
তখন তিনি কেজিবি’র (কেজিবি: রাশিয়ান ভাষায়- কমিটেট গোসুদারস্তভেনয় বেজোপাসনস্তি। ইংরেজিতে: কমিটি ফর স্টেট সিকিউরিটি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ইন্টেলিজেন্স সিকিউরিটি এজেন্সি। কেজিবি মূলত মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, যা সেনা আইনে পরিচালিত হতো। সেভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই সংস্থা বর্তমানে রাশিয়ান সরকারের অধীনে ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস বা ফেরন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস নামে পরিচালিত হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কেজিবি নামে বর্তমানে একটি ইন্টেলিজেন্স সংস্থা আছে, তবে তা অন্য দেশের। রাশিয়ার সাহায্যে রিপাবলিক অব জর্জিয়া ভেঙ্গে ১৯৯০ সালে জন্ম নেয় রিপাবলিক অব সাউথ ওসেটিয়া। এই নতুন দেশটিই তার গোয়েন্দা সংস্থার নাম দিয়েছে কেজিবি।) হয়ে কাজ করেন। কিন্তু একথা তার প্রথম স্ত্রী জেনেছিলেন বিয়ের মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে। সেইপেল্ট নামক এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এর ব্যাখ্যা হিসেবে পুতিন বলেছিলেন, কেজিবি’র কেউ যদি নিজের পরিচয় উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে কেজিবি’তে তার আর কোনো স্থান নেই।
৫. জার্মান ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন পুতিন
টানা পাঁচ বছর পুতিন কেজিবি’র সদস্য হিসেবে ড্রেসডেনে কাটান। এর সুবাদেই তিনি জার্মান ভাষা শেখেন এবং এই ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারেন। ১৯৯০ সালে পুতিনকে আবার মস্কোতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
৬. সৌভিয়েত ইউনিয়ন পতন
সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে মেনে নিতে পারেননি ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি মনে করেন, এটা বিংশ শতাব্দির সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।
৭. পুতিন গোয়েন্দা কাহিনী ভালোবাসেন
নিজে ছিলেন কেজিবি’র গোয়েন্দা। হয়তো বিষয়টা তার ভেতরে স্থায়ীভাবেই গেঁথে গেছে। আর সেকারণেই হয়তো তিনি গোয়েন্দা গল্প পছন্দ করেন খুব। একবার তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, পুরো একটা সেনাবাহিনী যেখানে বিফল, সেখানে একজন মানুষের কৃতিত্বে জয় পাওয়ার বিষয়টা আমাকে রোমাঞ্চিত করে সবসময়। তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে সরাসরি কেজিবি’তে ঢোকেন এবং ৮০’র দশকের পুরোটা সময় পশ্চিমাদের উপর গোয়েন্দাগিরি করে সৌভিয়েত ইউনিয়নকে সেবা দেন।
৮. পুতিন তার কুকুরদের খুব ভালোবাসেন
পুতিন তার পোষা কুকুরদের এতো ভালোবাসেন, মাঝে মাঝেই দেখা যায় রাজনৈতিক কার্যকলাপেও এই কুকুরগুলো তার সাথে আছে। এমনকি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও কুকুরগুলো থাকে কখনো কখনো। অনেকেই মনে করেন, যাদেরকে তিনি ভয় দেখাতে চান, শুধুমাত্র তাদের সাথে বৈঠকের সময়ই কুকুরগুলোকে সাথে রাখেন।
৯. পুতিনের দুই মেয়ে
দুই মেয়ে সন্তানের জনক পুতিন। কিন্তু তাদের নাম, পরিচয় পুরোপুরি অজানা। তারা কোথায় থাকে, কি কাজ করে এমনকি তারা কোত্থেকে লেখাপড়া করেছে, তাও কেউ জানে না। ধারণা করা হয়, তারা ছদ্মনাম এবং পরিচয় ব্যবহার করে।
১০. পুতিনের গাড়ি
ফর্মুলা ওয়ান রেস কার চালাতে ভালোবাসেন পুতিন। এই ৬৩ বছর বয়সে এসেও তিনি ১শ’ ৫০ মাইল বেগে গাড়িতে গতি তোলেন যখন মুড ভালো থাকে।
সূত্র: হাফিংটন পোস্ট
Exit mobile version