ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বয়রা গ্রামের এক অধিবাসী দুই দেশের মধ্যে বসবাস করছেন। রেজাউল মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তির স্থানীয় পরিচয় তিনি ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের বাসিন্দা। বিএসএফ বা বিজিবি’র কাছে তার পরিচয় ৩৯/১১ এস পিলারের বাসিন্দা তিনি।
রাজনীতিবিদ তথা দেশনেতাদের কল্যাণে রেজাউল মণ্ডলের শোয়ার ঘর বাংলাদেশে এবং রান্নাঘর ভারতের মধ্যে পড়েছে। তাকে অবশ্য খাজনা দিতে হয় দু’দেশেই। জন্মসূত্রে তিনি ভারতীয়ই। তার বাবা দাদাও ভারতের অধিবাসী ছিলেন। এক সময়ের ধনী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবার ছিল এটি। পরবর্তীতে দেশভাগের কবলে পড়ে অনেক কিছুই খোয়াতে হয়েছে তাকে। এখনো শেষমেশ ১৬ বিঘা জমির মালিক তিনি। আট বিঘা ভারতের মধ্যে, আট বিঘা বাংলাদেশের মধ্যে। বহুদিন ধরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিশেষ অনুমতি নিয়ে সাড়ে ১০ মন ধান আনতে পারতেন তিনি। এখনো সেইসব অনুমতিপত্র সযত্নে ল্যামিনেশন করে রেখেছেন তিনি।
রেজাউল মন্ডল জানান, পরবর্তীতে নানা ঝামেলা এবং অসুবিধার কারণে ধান নিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের মধ্যে থাকা চাষাবাদের জমি খানিকটা অদলবদল করা হয়। কিন্তু তাতেও বিশেষ সুবিধা হয়নি। এখনো বেশ কিছু জমি ওপারে রয়েছে বলে রেজাউল মন্ডল জানান।
তিনি বলেন, এসব জমি কোনো সরকারের নয়, আমার নিজস্ব জমি। এই জমিতে আমি বসবাস অথবা ফসলাবাদ করতে চাই স্বাধীনভাবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। চাষের জমিতে যেতে হলে বিএসএফের কাছে ভোটার পরিচয়পত্র জমা রাখতে হয়, তবেই জমিতে যাওয়া যায়। কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে চাষের জমি পড়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর বয়রা গ্রামের বিপরীতে রয়েছে বাংলাদেশের গদাধরপুর গ্রাম। চৌগাছা উপজেলা তথা যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত গ্রামটি। খাতাকলমে গদাধরপুর গ্রামেরও অধিবাসী রেজাউল মন্ডল। তাই সেখানকার স্বরূপদহ ইউনিয়ন পরিষদে ট্যাক্সও দিয়ে থাকেন তিনি। ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট সর্বশেষ ট্যাক্স দিয়েছেন ৯ নম্বর স্বরূপদহ ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স ও রেট আদায় খাতে।
রেজাউল মণ্ডলের আক্ষেপ, সম্পত্তিগুলো যদি একদিকে থাকতো তাহলে বিএসএফ-বিজিবি ইত্যাদির ঝামেলা পোহাতে হতো না। রেজাউল মণ্ডল জানান, ‘তিন তিনবার সার্ভে হয়েছে এখানে। সীমানা এমন জায়গা দিয়ে গেছে যে, আমার বসবাসের ঘর বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। আবার রান্নাঘরসহ ধানের গোলা ইত্যাদি ভারতের মধ্যে পড়েছে। এতে উভয় সংকটে পড়েছি।’
বয়রা উত্তর পাড়া এলাকায় প্রায় ৬০ ঘর অধিবাসী রয়েছেন, যাদের বাড়ি সীমান্ত পিলার ঘেঁষা ভারতীয় এলাকার মধ্যে। তবে অর্ধেক ভারতে এবং অর্ধেক বাংলাদেশে এমন অধিবাসী শুধু রেজাউল মণ্ডলই।
চার ছেলে (ইয়ারুল, আমিরুল, হাবিবুর, হাফিজুর) এবং দুই মেয়ে (মর্জিনা ও সেলিনা) তার। মর্জিনার বিয়ে হয়েছে যশোরের মনিরামপুরে। হাফিজুর কোলকাতা পুলিশে চাকরি করে। অন্যরা চাষাবাদ নিয়ে আছে। গৃহকর্ত্রী আলেয়া মণ্ডল জানান, কিছুটা অসুবিধা তো আছেই, তবু দুই দেশের মধ্যেই বসবাস করছি এটা একটা আলাদা অনুভূতি। সূত্র: আইআরআইবি