Friday, December 27, 2024
Homeসুস্থ থাকুন৩০ দিনে ৫ কেজি কমিয়ে ফেলুন

৩০ দিনে ৫ কেজি কমিয়ে ফেলুন

আমরা সকলেই সুন্দর হতে চাই, সুস্থ থাকতে চাই। কিন্তু নিত্য নিয়ম, সময়ের স্বল্পতা, আমাদের আলস্য, অনীহা সব মিলিয়ে নিজের পরিচর্যা করাটা সব সময় হয়ে উঠে না। কিন্তু নিজেকে ফিট রাখাটা একান্ত জরুরি। বাড়তি ওজন শুধু আপনার দৈহিক সৌন্দর্যকেই নষ্ট করে না বরং বিভিন্ন রোগের আশঙ্কাকেও বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে নিজের মতো করে নিজেকে উপস্থাপন করাটাও একটি শৈল্পিক বিষয়। তাই নিজেকে সুন্দর রাখতে সব সময়ই দরকার নিজের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজনে লিখেছেন রিয়াদ খন্দকারবাড়তি ওজন আমাদের একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। বাড়তি ওজনের জন্য নিজের সৌন্দর্য এবং মানসিক অবস্থা অনেকখানিই নষ্ট হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ওজন শুধু বেশি খাওয়ার কারণেই হয় না, এটি একটি রোগও বটে। বেশি খাওয়ার কারণে শরীরে যে পরিমাণ এনার্জি জমা হয় তা ঠিকমতো ব্যবহার না করলেই মানুষ মোটা হয়। তবে বাতাস খেয়েও কেউ কেউ মোটা হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস আছে। যাই হোক চিরস্থায়ী ওজন কমাতে দরকার সময় এবং চেষ্টা। অবশ্য এ ব্যাপারে আপনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে এবং জীবনভর মেনে চলার একটি জীবন পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। প্রথমে আপনি নিশ্চিত হোন আপনি চিরস্থায়ী পরিবর্তন চাচ্ছেন এবং আপনি তা করছেন সঠিক অর্থেই। কেউ আপনার ওজন কমিয়ে দেবে না। বরং চারপাশের কাছের মানুষের চাপ আপনার ব্যাপারটাকে আরও খারাপ করে দিতে পারে। তবে আপনাকে খাদ্য ও শরীরচর্চার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এ সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে।
অতিরিক্ত ওজনঅতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা তখনই বলা হবে যখন শরীরে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাবে। মানুষের শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় সঞ্চিত চর্বি মোট ওজনের শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ থাকে। সব ক্ষেত্রে দেহের ওজন বেশি হলেই স্থূলতা বলা যায় না। যেমন একজন খেলোয়াড়ের দেহের ওজন বেশি থাকতে পারে তার শরীরে সুশৃঙ্খলভাবে বর্ধিত মাংসপেশির জন্য, যা হয়তো ওজন নির্ধারণের ফর্মুলায় ফেললে ওজনাধিক্যের মধ্যে হতে পারে। যাকে কখনোই স্থূলতা বলা যাবে না। সে জন্য দেহের জমাট বাঁধা চর্বি পরিমাপের মাধ্যমে ওজনাধিক্য বা স্থূলতা নির্ণয় করা শ্রেয়।যেভাবে হয়
অতিরিক্ত ওজন হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে শরীরের প্রয়োজন থেকে বেশি খাবার খাওয়া অর্থাত্ বেশি ক্যালোরির খাবার খাওয়া। শরীরের প্রয়োজন মেটানোর পর বাড়তি খাবারগুলো চর্বি হয়ে দেহকোষে জমা হয়। কিছু চর্বি শরীরে জমা থাকা দরকার প্রয়োজনে শক্তি সরবরাহ করার জন্য। কিন্তু চর্বি বেশি জমা হলেই ওজনাধিক্য তৈরি হবে।

মানসিক উত্সাহ নিন

ওজন কমাতে আপনার নিজের ব্যাপারে নিজেকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু তাই বলে নিতান্তই একা নন। আপনি মানসিক জোর পেতে পারেন আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে, বন্ধুদের কাছ থেকে। এমন মানুষ নির্বাচন করুন যে কিনা আপনাকে মূল্য দেবে এবং আপনার কথা শুনবে। আপনার শরীর চর্চার সময় আপনাকে সঙ্গ দেবে।

পুষ্টিকর খাবার খান

নতুন করে খাদ্যাভাস শুরু করুন, যাতে কিনা আপনার খাদ্যে ক্যালোরির পরিমাণ কমে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে ক্যালোরি কমাতে আপনার খাদ্যের রুটিন, তৃপ্তি ও খাদ্য তৈরির সহজ পদ্ধতির কোনোটিই যেন বাদ না যায়। সবচেয়ে ভালো পথ হলো, আপনি বেশি বেশি করে উদ্ভিদ খাদ্য, যেমন ফল, সবজি এবং আঁশজাতীয় খাদ্য খান। সব সময় সচেষ্টা থাকুন যেন আপনার খাদ্য বৈচিত্র্যময় হয় এবং রুচি ও পুষ্টি অপরিবর্তিত থাকে।

কর্মতত্পর হোন, কাজের মধ্যে থাকুন

শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রণই আপনার ওজন কমাতে পারে না। যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে ৫০০ ক্যালোরি কমাতে পারেন তাহলে আপনার ওজন কমে প্রতি সপ্তাহে আধা কেজি। আবার ৩৫০০ ক্যালোরি কমালেই মাত্র ১/২ কেজি ফ্যাট কমবে। কিন্তু আপনি প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ মিনিট স্বতস্ফূর্ত হাঁটুন সপ্তাহে অন্তত ৪ দিন আপনার ক্যালোরি দেখবেন কমছে ২ গুণ।

ওজন কমাতে শরীর চর্চার উদ্দেশ্য হলো ক্যালোরি পুড়ানো, কতটুকু ক্যালোরি খরচ হলো তা নির্ভর করে আপনার শরীরচর্চার পরিমাণ ও কত সময় ধরে করলেন তার ওপর। সবচেয়ে ভালো সহজ উপায় হলো—প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা। আর ছোটখাটো সহজ উপায় হলো আপনার শারীরিক তত্পরতা আপনি বাড়াতে পারেন—লিফটে না উঠে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন, গাড়িটা বাদ রেখে আশপাশের বাজারঘাট, অফিস হেঁটেই যান।

প্রতি সপ্তাহের আপনার ডায়েট চার্টটি যেমন হতে পারে

সম্পূর্ণরূপে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বর্জন করুন। অবশ্যই দৈনিক ৩-৭ লিটার পানি পান করতে হবে। লেবু পানি, সোডা পানি, কফি, চা ইত্যাদি পানীয় পান করতে পারবেন তবে ক্রিম, ক্রিমজাতীয় খাবার ও চিনি বর্জন করতে হবে।

আপনার ১ মাসের ডায়েট রুটিন এ রকম হতে পারে।

১ম দিন

কলা ব্যতীত যত ইচ্ছা ফল খান, অন্য কোনো খাবার গ্রহন করবেন না, শুধু ফল খাবেন।

২য় দিন

পছন্দ অনুযায়ী শাক-সবজি কাঁচা বা রান্না করে খেতে পারেন। রান্না অবশ্যই মসলা ব্যতীত হতে হবে। পছন্দের শাক-সবজি সিদ্ধ করে পানি ফেলে অল্প তেলে ভেজে নিন লবণসহ।

৩য় দিন

এই দিনে কলা ব্যতীত ফল-মূল, শাক-সবজি ইচ্ছা মতো খাবেন।

৪র্থ দিন

এই দিনে আপনি ৮টি মাঝারি আকারের কলা ও তিন গ্লাস (২০০মিলি) দুধ খাবেন। অন্য কিছু খাওয়া যাবে না।

৫ম দিন

অল্প পরিমাণ চর্বিহীন মাংস ও ৬টি টমেটো খান।

৬ষ্ঠ দিন

এই দিন ইচ্ছামতো চর্বিহীন মাংস ও শাক-সবজি খাবেন।

৭ম দিন

এই দিন বাদামি চাল, ফলের রস এবং সকল প্রকার শাক-সবজি ইচ্ছামতো গ্রহণ করুন।
কিছু সহজ এক্সারসাইজঅনেকেই মনে করে এক্সারসাইজ করা মানে শরীর থেকে বাড়তি ওজন কমানো, এক্সারসাইজ শুধু বাড়তি ওজন কমানোর জন্য নয়। বরং নিজেকে সারাদিন ফিট, চনমনে রাখতে আর শরীরের কলকব্জাগুলোকে পরিপূর্ণভাবে সজাগ রাখতেই এক্সারসাইজ করতে হয়। অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে কিংবা ওজন কমাতে এক্সারসাইজ অপরিহার্য। আপনার শরীর যে ধরনের এক্সারসাইজ বহন করতে পারে বা তার সহ্য ক্ষমতা যে ধরনের এক্সারসাইজকে ধারণ করতে পারে সে রকম এক্সারসাইজই বেছে নিন, তবে এ সবকিছু করার জন্য আপনাকে মানতে হবে সহজ কিছু নিয়ম।

নিয়ম ১
ওয়ার্মআপ করার জন্য বাড়ির ছাদে বা সামনের রাস্তা থেকে ২০ মিনিট হেঁটে আসুন। যদি বাড়িতে ট্রেডমিল থাকে তাহলে ১০ মিনিট ট্রেডমিলে দৌড়াতে পারেন। একেবারেই জায়গা নেই এমন হলে আপনি আপনার রুমেই স্বাচ্ছন্দ্যে দৌড়াতে পারেন।

নিয়ম ২

এরপর পালা শুরু হবে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজের, অর্থাত্ এক্সারসাইজের মাধ্যমে পিঠ, ঘাড়, হাত এবং পা ভালোভাবে স্ট্রেচ করা দরকার।

নিয়ম ৩

এবার করুন কার্ডিওয়ার্ক আউট। একটু জোরে হেঁটে আসুন, আস্তে আস্তে গতি বাড়ান এরপর ১৫ মিনিট জগিং করতে পারেন। পুরো ৩৫ মিনিট কার্ডিওয়ার্ক করলে আপনার শরীরের জন্য যথার্থ উপকার পাবেন।

নিয়ম ৪

নিজেকে কোল্ডডাউন করতে ৫ মিনিট একদম আস্তে আস্তে হাঁটুন এখন ৫ মিনিট স্ট্রেচ করতে পারেন। কিছু সহজ এক্সারসাইজ বাড়িতে ট্রাই করতে পারেন।

নিয়ম ৫

সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত সোজা করে ঘরের সিলিংয়ের দিকে স্ট্রেচ করুন। এবার পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে যতটা সম্ভব জোরে লাফান। মাটিতে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবার লাফান কোনো ব্রেক দিবেন না। টানা এক মিনিট লাফাতে থাকুন। এক মিনিট ব্রেক দিয়ে আবার শুরু করুন। দশ-বারোবার এইভাবে লাফাতে পারেন।

নিয়ম ৬

মাটির উপর শুয়ে পড়ুন তারপর দুটি হাতের সাহায্যে মাটি থেকে উঠার চেষ্টা করুন। হাতে কোনো ভাঁজ যাতে না পড়ে। শুরুতে মোটামুটি ৫-১০টি পুশআপ দিতে চেষ্টা করুন। অনেক সময় এক হাতের উপর ভর দিয়েও পুশআপ করা যায়।

কিছু ঘরোয়া উপায়

বাড়তি ওজন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ওজন কমান প্রাকৃতিক নিয়মে। এ নিয়ম স্বাস্থ্যসম্মত ও ঝুঁকিবিহীন। কয়েকটি কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে ওজন কমান আর ঝুঁকিমুক্ত থাকুন বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকে।

++ তাজা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি হলো কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, তাই যাদের ওজন বেশি তাদের বেশি করে এগুলো খাওয়া উচিত।

++ অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। কারণ, লবণ শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

++ দুধযুক্ত খাবার, যেমন :পনির, মাখন—এগুলো পরিহার করতে হবে। কারণ, এগুলো উচ্চ চর্বিযুক্ত। সঙ্গে মাংস ও আমিষজাতীয় খাবারও নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।

++ উচ্চ শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন—চাল, আলু অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে, আর গম (আটা) খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

++ মসলাজাতীয় খাবার, যেমন :আদা, দারুচিনি, কালো মরিচ এগুলো প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে। মসলাজাতীয় খাবার হলো ওজন কমানোর কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।

++ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন কমানোর আরেকটি ভালো উপায় হলো মধু খাওয়া। মধু দেহের অতিরিক্ত জমানো চর্বিকে রক্ত চলাচলে পাঠিয়ে শক্তি উত্পাদন করে, যা ব্যবহূত হয় দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপে। মধু খাওয়া প্রথমে শুরু করতে পারেন অল্প পরিমাণে, যেমন—এক চামচ বা ১০০ গ্রাম, যা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস দিয়ে খেতে পারেন।

++ যারা পথ্য নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মেনে চলেন বা দিনের পর দিন উপবাস করেন ওজন কমানোর জন্য, তাদের জন্য মধু ও লেবুর রস খুবই উপকারী।

এটি কোনো ধরনের শক্তি ও ক্ষুধা নষ্ট করে না। এ ধরনের চিকিত্সায় এক চামচ টাটকা মধুর সঙ্গে আধা চামচ কাঁচা লেবুর রস আধা গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার খেতে হবে।

++ বাঁধাকপিকে ওজন কমানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হিসেবে ধরা হয়। বাঁধাকপি মিষ্টি ও শর্করাজাতীয় খাবারকে চর্বিতে রূপান্তর করতে বাধা দেয়। এ জন্য বাঁধাকপি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে ওজন কমাতে। এটিকে কাঁচা অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়।

RELATED ARTICLES

আজকের দিনের জনপ্রিয়